বাড়ির পাশে একটি কিন্ডারগার্টেনে পড়ে ছোট্ট সিনহা। একমাত্র সন্তান হওয়ায় পরিবারে আদরের সাগরে ডুবে থাকে পাঁচ বছরের মেয়েটি। তবে তার হৃদয় জুড়ে থাকত বাবার সঙ্গে। সকালে বাবার হাত ধরে পড়তে যাওয়া, একসঙ্গে খাওয়া ও রাতে কাঁধে মাথা রেখে ঘুমানোসহ নানা বায়না শিশুটির নিত্যকাণ্ড। পরম যত্নে এসব আবদার পূরণ করেই গ্রামে হেঁটে হেঁটে সবজি বিক্রি করতেন সাজ্জাদ হোসেন (৩০)। কিন্তু দিন দশেক ধরে মেয়েটি আর মুখে দানাপানি তুলছে না। গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকছে, খেতে বসলেও ভাত নিয়ে পিতার জন্য অপেক্ষা করে। তাকে কোনো মতেই বোঝানো যাচ্ছে না যে, একটি গুলি তার বাবাকে চিরতরে বিদায় করে দিয়েছে। আর কোনোদিন চকলেট নিয়ে আসবে না, করবে না আদর।

জানা গেছে, সবজি বিক্রেতা সাজ্জাদের বাড়ি রংপুর নগরীর পূর্ব শালবন এলাকায়। সাত বছর আগে নগরীর আনছারির মোড় এলাকার জিতু বেগমকে বিয়ে করেন তিনি। মা, স্ত্রী ও শিশুকন্যাকে নিয়েই ছিল তাঁর হাশিখুশির জীবন। অভাব-অনটনের সংসারের চাকা সচল রাখতে রংপুর সিটি বাজারের আড়ত থেকে সবজি কিনে পরদিন পাড়া-মহল্লায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতেন সাজ্জাদ। গত ১৯ জুলাই সবজি কিনে আড়ত থেকে ফেরার পথে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ-সহিংসতার শিকার হন তিনি। নগরীর কৈলাশরঞ্জন স্কুলের মোড়ে হঠাৎ একটি গুলি তাঁর ডান পাঁজরে ঢুকে শরীর ভেদ করে বাঁ পাঁজর দিয়ে বেরিয়ে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিভে যায় প্রাণপ্রদীপ।

সূত্র- সমকাল, ঘুমের মাঝেও বাবাকে খুঁজছে ছোট্ট সিনহা (Archived)