বাড়ির ছাদ থেকে রাস্তায় ধোঁয়ার কুন্ডুলি দেখে খেলা ফেলে দেখতে গিয়েছিলো ছায়াদ মাহমুদ খান (১২)। তাই নিয়ে উৎকণ্ঠিত হয়ে ওঠেন বাবা-মা ও শিক্ষক। শেষ পর্যন্ত তাদের উৎকন্ঠাই সত্যি হলো। প্রতিবেশীর মোবাইলে তোলা ছবিতে পায়ের জুতা দেখে মা-বাবা শনাক্ত করলেন ছেলের লাশ। 

ছায়াদের বাবা বাহাদুর খান বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালীন ২০ জুলাই ছায়াদের মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় বাড়ীতেই ছিল সে। বাবা-ছেলে একসাথে বসে দুপুরের খাবার খেয়েছি। দুপুরের খাওয়া শেষে ছায়াদ ওর বন্ধুদের সাথে বাড়ির ছাদে যায় খেলতে। এর কিছুক্ষণ পর আমিও মেয়ের জন্য ওষুধ কিনতে বাড়ির বাইরে যাই। তখন সাভার বাজার বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলছিল। এসময় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নিউমার্কেটের সামনের ওভার ব্রীজে ধোঁয়ার কুন্ডুলী দেখে তা দেখার জন্য বিকেল ৫টার দিকে বাড়ীর ছাদে খেলতে থাকা ছায়াদ নিচে নেমে নিউমার্কেটের সামনে চলে যায়। 

তিনি বলেন, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলে আমরা ছায়াদকে খুঁজতে শুরু করি। এসময় আমি স্থানীয় একটি মসজিদের সামনে দাঁড়াই যাতে ও নামাজ পড়তে গেলে বের হওয়ার সময় দেখতে পাই। এসময় বিভিন্নজনকে ছায়াদের কথা জিজ্ঞেস করে খোঁজ করতে থাকি। তখন এক ব্যক্তি তার মোবাইল ফোনে তোলা একটি ছেলের গুলিবিদ্ধ ছবি দেখায় যেখানে শুধু ওর পা আর পায়ের জুতো দেখা যাচ্ছিল। তখন আমি আর আমার স্ত্রী চিনতে পারি এটা আমাদের ছেলের জুতো। জানতে পারি ও গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তখন স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর নিয়ে পাশ^বর্তী শাহীবাগের প্রজন্ম স্কয়ার হাসপাতালে ছুটে যাই। সেখান থেকে হাসপাতালের লোকজন আমাদের জানায়, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একটি ছেলেকে  এখানে নিয়ে এসেছিল স্থানীয়রা। তবে অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাকে আমরা সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি। তখন আমি এনাম হাসপাতালের পাশেই থাকা আমার ভাগ্নে নাহিদকে ছায়াদ মাহমুদের গুলিবিদ্ধের খবর দিয়ে ওর চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিতে বলি। আমি আর আমার স্ত্রীও দ্রত এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যাই। হাসপাতালে গিয়ে দেখতে পাই সেখানকার বারান্দায় আমার ছেলের নিথর দেহ পড়ে আছে। চিকিৎসক জানান, পায়ের উপরের অংশ গুলিবিদ্ধ হয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে ছায়াদ মারা গেছে। 

সূত্র- বিএসএস, “ছবিতে পায়ের জুতা দেখে শনাক্ত হলো ছোট্ট ছায়াদের লাশ” (Archived)

July Massacre