ধূসর চোখ আর বাদামি রঙের চুলের কারণে খুব সহজেই মাহিনকে আলাদা করা যেত। একবার বাংলাদেশ শিশু একাডেমি থেকে মায়ের অগোচরে কোন ফাঁকে বেরিয়ে চলে যাচ্ছিল হাইকোর্টের দিকে। এক পুলিশ সদস্য তাকে চিনতে পেরে ফিরিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন মায়ের কাছে। পাঁচ বছর বয়সে ছেলের সেই ‘হারিয়ে যাওয়ার’ গল্প বলতে গিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠেন মা। বললেন, ‘শেষ পর্যন্ত ছেলে আমার হারিয়েই গেল।’
ছাত্র–জনতার আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট রাজধানীর উত্তরার আজমপুরে রাজউক কমার্শিয়াল কমপ্লেক্সের সামনে গুলিতে নিহত হয় আব্দুল্লাহ আল মাহিন (১৬) নামের এই কিশোর। তার পরিবার জানিয়েছে, একজন হেলমেটধারীর অস্ত্রের গুলিতে সে নিহত হয়।
মাহিনের বাবা জামিল হোসেন প্রথম আলো অনলাইনের একটি ছবি দেখান এই প্রতিবেদককে। ছবিতে দেখা যায়, দুজন মানুষ রাস্তায় গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। এর একজন মাহিন। কাছাকাছি দাঁড়ানো সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের লোকজন। কারও হাতে লাঠি, সবুজ জার্সি গায়ে হেলমেট মাথায় একজনের হাতে অস্ত্র।
জামিল বলেন, প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে শুনেছেন, অস্ত্র হাতে দাঁড়ানো ব্যক্তি খুব কাছ থেকে গুলি করেছেন দুজনকে। প্রথম গুলি মাহিনের বাঁ চোখে লাগে। মাহিন চোখে হাত দিয়ে ঘুরে বসে পড়লে ওর মাথার পেছনে আরেকটা গুলি করা হয়। প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত একটি ছবি (একজন শিক্ষার্থী রক্তাক্ত এক কিশোরকে কোলে নিয়ে ছুটছেন) দেখিয়ে জামিল হোসেন বলেন, রক্তাক্ত কিশোরটি তাঁর ছেলে মাহিন। আওয়ামী লীগের ওই কর্মীরা সরে যাওয়ার পর রাস্তা থেকে কোলে করে মাহিনকে হাসপাতালে নেন ওই শিক্ষার্থী। মাহিনকে যিনি গুলি করেছেন এবং যাঁরা দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁদের এলাকাবাসী চেনেন। এলাকার সাবেক সংসদ সদস্যের বাহিনী। জামিল হোসেন জোর গলায় বললেন, তিনি ছেলে হত্যার বিচার চান। মামলা করতে চান।
সূত্র- প্রথম আলো, ‘বিজয় এল, অথচ আমার ছেলে কিছু দেখল না’ (Archived)