‘মা তুমি আমারে এত বুঝাও কেন, সবাই বের হয়েছে, আমি আর ঘরে থাকতে পারবো না, আমি গুলি খেয়ে মারা গেলে তুমি শহিদের মা হবা। এত চিন্তা কইরো না।’ ছেলেকে আন্দোলনে যেতে নিষেধ করায় মাকে বলা শহিদ জিসানের এটিই ছিল শেষ কথা।

কুমিল্লার লাকসাম পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শহিদ আব্দুর রহমান জিসানের মা জেসমিন আক্তার কাঁদতে কাঁদতে বাসসকে এ কথা বলেন।

জিসানের আত্মীয় মোঃ আজাদ হোসেন বলেন, জিসানের বাবা বাবুল মিয়া আমার ভাগিনা। সে দেশে আওয়ামী লীগের নির্যাতন ও হামলার কারণে বিদেশে চলে যায়। তার পরিবার ঢাকায় বাসা ভাড়া করে থাকতো।

গত ২০ জুলাই যাত্রাবাড়ি এলাকায় ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে জিসান অংশ নেয়। প্রচন্ড গরমে আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্রদের সে পানি খাওয়ানো শুরু করে। এ সময়ে পুলিশ তাকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। তার চোখ দিয়ে গুলি লেগে পিছন দিয়ে বের হয়ে যায়। অসুস্থ বাবুল মিয়ার ছেলে জিসানই ছিল পরিবারের একমাত্র সম্বল। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাবুল মিয়া এখন দিশেহারা। মোঃ আজাদ হোসেন অবিলম্বে জিসান হত্যাকারীদের বিচার দাবি এবং অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে সরকারের প্রতি আহব্বান জানিয়েছেন।

জিসানের মা জেসমিন আক্তার আরো বলেন, ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে জিসানের বাবা ২২ জুলাই দেশে আসেন। ছেলের শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এ ঘটনার নয় দিনের মাথায় জিসানের মৃত্যুর শোক সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন তার স্ত্রী মিষ্টি। মাত্র ১৪ মাস আগেই তারা ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। স্বামী অসুস্থ, ছেলে ও ছেলের বউ নাই। আমার সুন্দর সংসার তছনছ হয়ে গেল। পরিবারের উপার্জন করার কেউ নাই। আমি অসহায় হয়ে পড়েছি। শোক সইবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি।

সূত্র- বাসস, ‘আমি আর ঘরে থাকতে পারবো না’ মাকে বলা শহিদ জিসানের শেষ কথা (Archived)

July Massacre