‘৫ আগস্ট সকাল ১০টা। যাত্রাবাড়ীতে মিছিল অইতাছে। আমার পোলা দ্বীন ইসলাম (২২) কইল, আম্মা একটু মিছিলে যাই। বারণ করলেও পোলাডা বাহিরে গেল। লগে আমার ছোট পোলা সামিউলও গেল। দুপুরের পর খবর পাইলাম, আমার দ্বীন ইসলামেরে পুলিশ গুলি করছে। ওর বাবারে নিয়া যাত্রাবাড়ী গেলাম। দেহি, আমার পোলা শেষ। পাঁচটা গুলিতে পোলাডার শরীর ঝাঁঝরা অইয়া গেছে। আমি পোলা হত্যার বিচার চাই না। পোলাডারে জিন্দা ফিরা চাই। যে খুন করল, তারে একটু দেখতে চাই। তারে জিগামু, কী অপরাধে আমার পোলাডারে খুন করল? পোলাডা তো দলবল করত না। কোরআনে হাফেজ ছিল।’
ছেলের বিষয়ে কান্নাভেজা কণ্ঠে শাহালাম বেপারি জানান, দ্বীন ইসলামকে নিয়ে অনেক আশা ও স্বপ্ন ছিল। দেখতে খুব সুন্দর ছিলেন। উচ্চতা ছিল ৬ ফুটের ওপরে। খুব মেধাবী ও বিনয়ী ছিলেন। রাজনীতি করতেন না। তবে খুব প্রতিবাদী ও সচেতন ছিলেন। সবাই তাঁকে খুব পছন্দ করতেন। হাফেজ হওয়ার পর চাকরির চেষ্টা করেও পাচ্ছিলেন না। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে দ্বীন ইসলামের সমর্থন ছিল। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের একটু আগে দুপুরে যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে এক অচেনা লোক ফোন করে তাঁকে (শাহালম) জানান, তাঁর ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
কান্নাভেজা গলায় মুঠোফোনে ধারণ করা দ্বীন ইসলামের বিভিন্ন ছবি দেখিয়ে শাহালাম বলেন, ‘কী দোষে আমার এমন সুন্দর ছেলেরে পুলিশ এভাবে গুলি কইরা মারল? একটুও বুক কাঁপল না তাদের? পুলিশ কি মানুষ না? তাদের কি ছেলেমেয়ে, ভাইবোন, মা–বাবা নাই? কার নির্দেশে আমার ছেলেকে মারল তারা। দেশ নতুন স্বাধীনতা পাইল, আইল, অথচ আমার ছেলে সেটা দেখতে পারল না। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।’
সূত্র- প্রথম আলো, ‘পোলাডারে জিন্দা ফিরা চাই’ (Archived)