‘আমার ছেলেডা (পারভেজ ব্যাপারী) রাজনীতি করত না, ঢাকার বাড্ডায় ফার্নিচারের দোকানে কাজ করত। গত ১৯ জুলাই রাইতে আন্দোলনের সময় ঢাহার (ঢাকার) রামপুরায় মিছিলে গেছিল। পুলিশের গুলি খাইছে হেনো (সেখানে)। দুই দিন তার কুনো খোঁজ পাই নাই। পরে তার লগের একজন বাড়িতে ফোন কইরা কইল, আমার ছেলেডা গুলি খাইয়া মরছে।’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছেলে নিহত হওয়ার কথা বলতে গিয়ে কোনোভাবেই কান্না চেপে রাখতে পারছিলেন না মা শামসুন্নাহার বেগম। শিশুর মতো অঝোরে কাঁদতে শুরু করেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ১৯ জুলাই রাত ১০টায় রাজধানীর রামপুরা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিলে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন পারভেজ (২৩)। সেখান থেকে তাঁর লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যান স্থানীয় লোকজন। পরে মরদেহটি আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কর্মীরা ঢাকার কাকরাইল কিংবা মুগদা এলাকার কবরস্থানে দাফন করেন। সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকায় কবরটিকে এ পর্যন্ত শনাক্ত করতে পারেননি স্বজনেরা।
আক্ষেপ করে পারভেজের বোন নূপুর বলেন, ‘ভাইয়ের লাশ একটু দেখতে পেলেও শান্তি পেতাম; কিন্তু তা-ও হয়নি।’কথাগুলো বলার সময়ই গলা ধরে আসছিল নূপুরের। একসময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বলেন, ‘এখনো মাঝেমধ্যে মনে হয়, আমার ভাই মরে নাই। শুক্রবার আইলেই মনে অয়, এই বুঝি ভাই ঢাকা থেকে ফোন করবে।’ নূপুরের কান্না দেখে চোখের পানি আটকাতে পারলেন না পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দুই বোন ঝুমুর ও খাদিজা। এই কান্না যেন সংক্রমিত হয়ে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ল পারভেজের মা–বাবা ও প্রতিবেশীদের চোখে–মুখেও।
সূত্র- প্রথম আলো, ছেলেডার লাশটাও দেখতে পারলাম না, এই দুঃখ কীভাবে ভুলি (Archived)